হাসঁ

হাঁস পালন ও তার পরিচর্যা

পৃথিবীর সব হাঁস এসেছে বনো-পাখি থেকে। এই বুনো পাখি আমাদের দেশের মাটিতে একদিন চরে বেড়াত। সে হাঁস এশিয়ার অন্য বুনো-হাঁসের মত এখানকার পানিতে, জঙ্গলে চরে বেড়াতো। এই বুনো হাঁস ”ম্যালারড্” গোষ্ঠীর। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো পৃথিবীর সব মুরগি এসেছে লাল বন- মুরগি থেকে। বৈজ্ঞানিক নাম যার গ্যারাস্ ব্যানবিন্ডা।

সকলেই জানে হাঁস জলচর জীব। জলছাড়া হাঁস এবং জলাশয় ছাড়া মাছ একই কথা। না একটু ভুল হয়ে গেল। পানি ছাড়া মাছ কল্পনা করা যায় না। মানলাম। কিন্তু জলাশয় ছাড়া হাঁস অসম্ভব! মোটেই না। অথচ, সত্যি কথা বলতে কী, পানির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই এমন পদ্ধতিতে ও হাজার হাজার হাঁস পালন সম্ভব। এবং সেটা হবে ঠিক মুরগির মত ঘরের মধ্যে রেখে। মেঝেতে বিছানা পেতে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে সে হাঁস- শুধু বাওয়া বা অনিষিক্ত ডিমই পেড়ে যাবে। তাতে কোনদিন বাচ্চা হবে না। নিষিক্ত ডিম চাইতে গেলে পানির সঙ্গে মদ্দা হাঁস ও লাগবে। এই কারণে অনায়াসে হাঁসকে পানি ছাড়াও পালন করা সম্ভব। কারণ, কেবল প্রজনন ছাড়া হাঁসের পানির দরকার পড়ে না।

হাঁসের বিশেষত্ব
হাঁসের তেলতেলে পালকগুলি ওর দেহে চাটুর মত সাজানো থাকার জন্য চট করে গায়ে পানি লাগে না। দেহে পানি না বসার আরো একটা কারণ হলো হাঁসের চামড়ার নিচে আছে চর্বির একটা পর্দা। এই কারণে হাঁস ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে থাকলেও ওদের দেহের নাম মাত্র ক্ষতি হয় না।
হাঁসের আরেক বিশেষত্ব ওর পায়ে। পায়ের তিনটি আঙ্গুল একটা পাতলা চামড়ায় মোড়া। ইংবাজিতে বলে ‘ওয়েব’। নৌকার বৈঠার মত কাজ করে ‘ওয়েব’। আঙ্গুল শেষ নখে। কোন কোন জতের হাঁসের নখ আত্মরক্ষার কাজ করে।

হাঁসের ঠোঁটটা ও লক্ষ্য করার মত। লাল থেকে কমলালেবুর রঙা। শক্তপোক্ত। ঐ শক্ত শক্ত ঠোঁটটার নিচে রয়েছে ঝিলি্ল। ঐ নরম শৈ্লষ্মিক ঝিলি্ল আটকে দেয় ওপরের শক্ত ঠোঁটের আবরণীর সাহায্য পানির মাঝের নানা ধরনের খাবার – শেওলা, কীটপতঙ্গ, মাছের ডিম থেকে ডিম পোনা, ধানীপোনা এমন কি ফুলধনী পর্যন্ত। অর্থাৎযা আটকাবে সব চলে যাবে সটান পাকস্থলীর মধ্যে।

হাঁসের ঠোঁট আত্নরক্ষার কাজে ও সাহায্য করে। মুরগি দিনে ডিম পাড়ে। হাঁস পাড়ে সমস্ত রাত ধরে এবং সকাল ৯টা পর্যন্ত। এর জন্যই গৃহস্থ সকাল ৯টার আগে হাঁস পুকুরে ছাড়তে চায় না। আর সকাল ৯টার অনেক আগে যদি কেউ ছাড়ে তবে ভাগ্যবানের পক্ষে ডুব দিয়ে উঠে অবাক করা রূপ পাবেন কিনা জানি না তবে হাঁসের ডিম পেতে পারেন।

হাঁসকে কাছ থেকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় হাঁস খুবই বুদ্ধিমান পাখি। অনেক রহস্যের চাবি কাঠি আছে ও্রর কাছে। বিলেত আমেরিকার মানুষ শুধু মাত্র হাঁসের জলকলি দেখেই ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দেয়। শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য এক বিশেষ জাতের হাঁস মানুষ সৃষ্টি করেছে।

হাঁসের খাবার
বিলেতি রাজ হাঁস গিস ছাড়া সব জাতের হাঁসই উভয়ভোজী। অর্থাৎ ওদের খাবারে আমিষ এবং শ্বেতসার দুটো খাদ্য উপাদানেরই আধিক্য রয়েছে। এককথায় হাঁসের খাবারটা হবে মুরগির কায়দায়। তবে হাঁসের খাবার সবটাই মুরগির মত নয়। তাই মুরগির সুষম খাদ্য হাঁসকে খাওয়ালে হাঁসের স্বাবিক উৎপাদন পাবেন না।

কিছুদিন আগে পর্যন্ত ব্যবসা বা বানিজ্য করার জন্য হাঁস পোষা হত না। আজ দিন পাল্টেছে। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস-মুরগির চেয়ে ও বেশি ডিম দেয় বলে তাকে সম্পূর্ন বৈজ্ঞানিক কায়দায় বিজ্ঞানীর সুপরামর্শমত সুষম হাঁস খাদ্য খাওয়ানো হচ্ছে। পরবতির্তে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালনের সময় সেটা বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

তবে দেশী হাঁসকে ঘরের কাজ চালানো গোছের ডিমের জন্য খাবার দিতে হবে- চালের কুড়ো, যে- কোন খোল (রেডি মহুয়া বাদ দিয়ে), আটার ভূষি, মাছ-মাংসের ফেলনা বা ফেলে দেওয়া জিনিস এবং প্রচুর গেঁড়ি, শামুক। মনে রাখতে হবে হাঁস প্রচুর খায় এবং তার ভাবটা সব সময়- এটা খাই, ওটা খাই। সুতরাং সুষ্ঠুভাবে হাঁস পুষতে হলে তার খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তাহলেই মাংস ও ডিমের প্রকৃত যোগান সম্ভব।

হাঁসের ডিম এবং মাংসের বাজার

হাঁসের ডিমের বাজারের বিষয়ে তেমন কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ আবহমান কাল থেকে মানুষ হাঁসের ডিম খেখয়ে আসছে। বাজারে গেলে লক্ষ্য করে দেখা যায় মানুষ প্রথমে চাইবে হাঁসের ডিম।

কারন এতে সে অভ্যস্ত। তার বাপ- পিতামহ তার ওপরের পুরুষরা হাঁসের ডিমে কোন অশুচি অমঙ্গলের চিহ্ন দেখেনি।
কিন্তু মুরগির ডিমের ব্যাপারে এটা বলা যাবে না। আজ থেকে মাত্র ত্রিশ বছরের আগে ও মানুষ খুব ঠেকায় না পড়লে মুরগির ডিম খেত না। অথচ, সেই মুরগির ডিম আজ এত প্রচলিত যে তাকে নিয়ে ও বাছ- বিচার হচ্ছে।

পোল্ট্রির ডিম অর্থাৎ উন্নত দো – আঁশলা বা জাত মুরগির ডিম খাব না। দেশি ডিম খাব। দাম ও দেশী ডিমের পোল্ট্রির ডিমের চেয়ে বেশি।
তবে হাঁসের ডিমের বিষয়ে এসব বাছবিচার নেই। কারণ, হাঁসের তো আর দেশি বা ফার্ম নেই। হাঁস অনেকে ঘরোয়া ভাবে বা বৃহৎ আকারের পোষে।
আর জাত হাঁসের কোন জাতই দেশী নয়। সুতরাং হাঁসের দেশি বা বিদেশী এসব ফারাক সৃষ্ট করে মানুষ ডিমের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে নি এবং পারবে ও না।

এছাড়া, হাঁসের ডিম আকারে বেশ বড়। এই কারণে খাদ্য সংস্থানের জন্যেও অনেকে হাঁসের ডিম পছন্দ করে থাকে।
ঠিক উল্টো সুর হাঁসের মাংসের ব্যাপারে। ওটা খাব না, মাংসে আঁশটে গন্ধ। ছোবড়া ছোবড়া খেতে। মুখে পালকের থেকে যাওয়া গোড়া লাগে। মাংসে পালকের জন্য ফুটোয় ভর্তি। মাংসের রং কালো। সাত- সতেরো।

কিন্তু এই হাঁসের মাংসও বাজারে আজ কাল পড়ে থাকে না। কারণ মানুষ প্রাণিজ আমিষের মাহাত্ন্য বুঝেছে। দেহের বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের স্ফুর্তি এবং দেহের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে আমিষ, বিশেষ করে প্রাণিজ আমিষ। হোক না হাঁসের মাংস হাজারটা আপত্তিজনক কথা। তবু পানিজ আমিষ এবং দামে মোটামুটি সস্তা সুতরাং বাজারে কখনই এই প্রাণীটিকে বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে যেতে দেখা যায় না।

পৃথিবীর বিভিন্ন জাতের হাঁস
তিন ধরনের হাঁস আছে পৃথিবীতে- (১) মাংসের জন্য বিখ্যাত, (২) ডিমের জন্য বিখ্যাত এবং (৩) ডিম এবং মাংস দুটি জিনিসই একই ধরনের হাঁসের কাছে পাওয়ার জন্য বিখ্যাত।

মাংসের জন্যে বিখ্যাত হাঁসগুলি
পিকিং,আয়লেশবারি, মাসকোভি, রুয়েল ক্যায়ুগা, সুইডেন হাঁস। মাংসের জন্য বিখ্যাত হাঁসগুলির মদ্দার ওজন ৫কেজি হলে মাদি হবে ৪কেজি।
(২) ডিমের জন্য বিখ্যাত হাঁস এটাই আর সেটা হলো- ”ইন্ডিয়া রানার” হাঁস নয় তো যেন আগের দিনের গ্রামের ডাক হরকরা।
পিঠে থলে বোঝাই জিনিসপত্র, আর মাথাটা উঁচুতে। ইন্ডিয়ান রানার এর রং তিন রকম- সাদা, পাঁশুটে অথবা সারা পিঠে পেনসিলের শিষের মতো দাগ কাটা।
(৩) মাংস এবং ডিমের জন্য বিখ্যাত খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস সৃষ্টিহয়েছে দুটি হাঁস থেকে। ইন্ডিয়ান রানার এবং রুয়েল ক্যায়ুগা।
প্রথমটা ডিমের জন্য এবং পরেরটা মাংসের জন্য বিখ্যাত। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসটি সষ্টি করেন তৎকালীন ভারতীয় ব্রিটিশ রাজ্যপাল পত্নী মিসেস ক্যাম্পবেল। হাঁসটির রং খাকি বা ছাই ছাই বাদামি।

বাংলাদেশী হাঁস
খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে এমন কোন তবে নিজস্ব হাঁস নেই। অথচ মজার কথা সব উন্নত জাতের মূল সূত্র ম্যালারড্ এককালে আমাদের দেশেরই পানিতে, জঙ্গলে চরে বেড়াতো।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে- দুইটি হাঁসের মিলনের মধ্যে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
এই দুটো হাঁসের রয়েছে দুটো ভিন্ন ভিন্ন গুণ। তাদের একটি মাংস এবং অপরটি ডিমের জন্য বিখ্যাত। তারা হলো ইন্ডিয়ান রানার এবং রুয়েল ক্যায়ুগা।
তৎকালীন পাকিস্তানী ( বর্তমান বাংলাদেশ) শাসক সেই হাঁসের চাষ নিজ দেশে করার জন্য জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা করে।
জনগন ও কম জায়গায় বা অল্প জায়গায় এমন লাভজনক ফলাফল দেখে বেশ উৎসাহী হয়ে পড়ে।

তার পর থেকে প্রথমে পাকিস্তান- পরে স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে খাঁকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস পালনের প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়। এই ভাবে প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ মানুষের কাছে পৌছে গেছে এই জাতের হাঁস পালনের সুফল বার্তা।
সবচেয়ে বড়ো কথা, খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস আমাদের দেশের আবহাওয়ায় টিকে ও গেছে ভাল। গড়ে ডিম দেয় বছরে তিনশো মতো। উন্নত জাতের দো-আঁশলা মুরগির চেয়ে কম তো নয়ই, বরং বেশি।

হাঁসের বাসস্থান
হাঁস পালনে সবচেয়ে সুবিধা ওদের বাসস্থন দেবার ব্যাপারে। নিচু, উচু, স্যাতসেতে বা জলো এবং শুকনো খটখটে- প্রায় সবরকম জায়গায় হাঁস পালন চলবে। বরঞ্চ জলো বা সঁযাতসেতে জায়গা ওরা পছন্দ ও করে।
বড় বড় ফলের ঝুড়ি, কাঠের বাক্র, তেলের ড্রাম বা পালনকারীর সুবিধামতো কোন একটা জায়গা হাঁসকে দিলেই চলবে।আশ্রয় তবে যাই হোক না কেন- মুখটা যেন ভালো করে খোলা থাকে।কারণ হাঁসের স্বভাব হলো ঘরে মাথা উঁচু করে ঢোকা।
আর একটা জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে হয় সেটা হলো- ঘরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন। হাঁসের ঘরে আলো- আঁধারির খেলা অহেতুক সৃষ্টি করা যাবে না। সম্পূর্ণ অন্ধকার রাখতে হবে ওদের। আর এতেই হাঁসের শরীর এবং মন ভালো থাকবে

হাঁস পিছু কতটা জায়গা দিতে হবে
বয়স্ক হাঁস পিছু ২ থেকে ৩ ব: ফু: জায়গা দিতে হবে। বাচ্চা মাদির জন্য দেবেন ১ ব: ফু:। রাতের আশ্রয় যদি শুধু হাঁসদের দিতে হয় তবে সুরক্ষার ব্যাবস্থার করতে হবে। বিশেষ করে শেয়ালের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত নজর দেওয়া উচিত।

আবার যদি পাকাপোক্ত ঘর করে ওদের রাখতে হয় তবে মেঝেয় মুরগির বিছানা করার কায়দায় খড়/বিচুলি শুকনো পাতা পেতে দিতে হবে। বিছানার গভীরতা ৫/৬ ইঞ্চি হলেই যথেষ্ট। এই ব্যবস্থায় হাঁসের ডিম ভাঙ্গবে না। আবার গড়িয়ে নাগাল ছাড়িয়ে অন্য কোথাও যাবে না।

পানি ছাড়া হাঁস পোষা
আগেই বলা হয়েছে কেবল প্রজনন ছাড়া হাঁসের পানির দরকার পড়ে না। ঠিক মুরগির কায়দায় বিছানা বিছিয়ে হাঁস পোষা যায়। তবে সুবিধা থাকলে ওদের অগভীর পানির ব্যবস্থা করে দেয় যায়। দশটা হাঁসের জন্য অগভীর একটা ডোবা বা ট্যাঙ্কের মাপ হলো গভীরতা ৯ ইঞ্চি, লম্বায় চওড়ায় ৬ ফুট্#৬১৬২০;৫ ফুট।

হাঁসের খাবারে শতকরা উপাদান
১ সপ্তাহ থেকে ৩ সপ্তাহ বয়সের হাঁসদের খাবারে থাকবে আমিষ- ১৯.৫%, স্নেহপদার্থ- ৪.৫%, তাপ বা শক্তির জন্য আঁশ ওলা খাবার দিতে হবে- ৪.৮%, ক্যালসিয়াম- ১.৭%, ফসপরাস- ০.৮৬% ।
তিন সপ্তাহের থেকে বেশি বড় হাঁসদের খাবারে আমিষ শতকরা ১৭ ভাগ হলে চলবে। তিল এবং বাদাম ছাড়া অন্য কোন খোসা জাতীয় খাবার হাঁসকে দেওয়া উচিত নয়। হাঁসকে প্রয়োজনে ( অথার্ৎ আমিষের উৎস খুঁজতে) এবং অপ্রয়োজনে প্রচুর শামুক বা গুগলি জাতীয় খাবার দিতে হবে।

গৃহস্থালির ফেলনা দিয়ে হাঁস পালন
পোষা না বলে আয় কথাটা বলাই ভালো। মানুষ তো ডিমের জন্য হাঁস পোষে। কিছু তো হাঁসকে খাওয়াতেই হবে। যতো খাওয়ানো যাবে ততো পয়সা মানে ডিম।

বুঝে-সুঝে খাওয়ালে আরো পয়সা। মানে বেশি ডিম। সুতরাং বেশি সংখ্যায় ডিম পেতে গেলে সংসারের ফেলে দেওয়া ভাত, ফ্যান. চাল ধোওয়া পানি, আনাজ – খোসা, মাছের আঁশ কাটা এবং সব সময় যত পারা যায় গুগলি-শামুক বা গেড়ি দিয়ে ও হাঁস পালন সম্ভব।এই কারণে ঘরোয়া পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রাণীবিজ্ঞানীরা হাঁস পালনের ওপরই জোর দিয়েছেন বেশি।

হাঁসের প্রজনন প্রক্রিয়া
প্রজনন কাজে পানি প্রয়োজন হয় জলকেলির জন্য। জলকেলি ছাড়া মাদি – মদ্দা প্রজননে উৎসাহ পায় না। দশটি মাদির পেছনে একটি মদ্দা যথেষ্ট।উন্নত জাতের হাঁস সাড়ে চার মাসে এবং দেশী হাঁস ছয় মাস বয়সে ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের ওজন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম। তা’বা তাপ দেবার ব্যাপারে দেশি হাঁস খুব একটা কাজের নয়।

ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করতে হলে সবচেয়ে ভালো পালিকা ু মা হিসাবে মুরগির সাহায্য নেওয়া। একটি মুরগি দশটি নিষিক্ত ডিমে তা দিতে পারে। মুরগির তা দেওয়া বাচ্চাকে ৩/৪ দিন পানিতে না নামতে দেওয়া উচিত। পানিতে নামলে ঠান্ডা লাগতে পারে। হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে ২৮ দিন সময় নেয়। ডিম তা দেওয়া কালে মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। সপ্তাহে দু -তিন বার।

ডিম সংরক্ষণ
ডিম পচতে না দিয়ে খাওয়ার যোগ্য হিসেবে নানা উপায়ে রাখা যায়। ফ্রিজে সপ্তাহ খানেক গরমের দিনে রাখা যাবে। যে অবস্থায় ডিম সংরক্ষন করা হোক না কেন, মূল উদ্দেশ্য হলো ডিমের মাথা মোটা অংশটায় বাতাস বেশি করে জমবে।
ডিম সংরক্ষণ করার উপায় আরো হলো- (১) ডিমে চুনের পানি মাখিয়ে রাখা বা প্যারাফিনে ডুবিয়ে নেওয়া।ওয়াটার গ্লাস বিকারক দিয়ে ও ডিম সংরক্ষণ করা যায়।

ডিম পচে কেন?
ডিম সংরক্ষণ ব্যাপারে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক ডিম পচে কেন? আগেই বলা হয়েছে ডিমের মোটা মাথা অংশটায় থাকে বাতাস।
এই বাতাসে অক্রিজেন ভাগ কমে যখন কার্বন ডাই- অক্রাইড ভাগ বেড়ে যায় তখনই ডিম পচে যায়। ডিম পচার আরো একটা কারণ হলো বীজণু। ডিমের খোসার অজস্র সূক্ষ সূক্ষ ফুটো দিয়ে ডিমের ভিতরে ঢুকে ডিমকে পচিয়ে দেয়।

ডিম ফোটাবার যন্ত্র ( ইনকিউবেটর)
পালিকা মুরগি ছাড়া ডিম ফোটাবার যন্ত্রের সাহায্যে ও হাঁসের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করা যায়। তবে ঐ তাপ হবে মুরগির তুলনায় কম, কিন্তু আর্দ্ররতা বেশি।প্রতিটি যন্ত্রের সাথে রয়েছে নির্দেশনামা। সুতরাং উক্ত নির্দেশনামা দেখে ডিম ফোটানোর কাজ করা যায়। তবে হাঁসের ডিম মেশিনের সাহায্যে ফোটানোর হয় না। এটা বেশিরভাগ সময় মুরগির ডিম ফোটাবার কাজেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কারণ হিসেবে বলা যায়, হাঁসের ডিম আকারে বড়ো। তাছাড়া, হাঁসের ডিমের খোঁসা মুরগির ডিমের তুলনায় বেশ শক্ত।

সুতরাং যন্ত্রের মাধ্যমে ডিম ফোটাতে হলে সঠিক তাপমাত্রা অনেক সময় ঠিক রাখা যায় না। অত্যাধিক যত্ন নেবার প্রয়োজন হয়। যেটার ধারাবাহিকতা রাখা বেশ কষ্টকর। এই কারণে, হন্ত্রের সাহায্যে হাঁসের ডিম ফোটাবার হার মোটে শতকরা ত্রিম ভাগ মাত্র। বেশির ভাগ হাঁস খামারী ডিম ফোটাবার জন্যে বেছে নেন মুরগি।

একদিনের শাবকের লিঙ্গ নির্ণয়
একদিনের বাচ্চার লিঙ্গ নির্ণয়ে খুব একটা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। শাবকের লেজের দিকটা বাঁ হাত ধরে উল্টে দিতে হবে। ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনীর সাহায্যে জোরে মলদ্বার টিপে ধরতে হবে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে। নর হলে লিঙ্গটা ছোট কাঁটার মতো বেরিয়ে আসবে, নারী হলে কিছুটা হবে না।
বড় মাদি হাঁসের কন্ঠস্বর তীক্ষ্ন। আর গলার স্বর ফ্যাসফেসে।
মদ্দা চেনার আরো উপায় হলো ওর লেজের পালক কোঁকড়ানো এবং ওপর দিকে তোলা।

ডিম বাজারে পাঠাবার সঠিক উপায়
ডিম বাজরে পাঠাবার আগে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে ডিমের বাইরের গা অথার্ৎ খোসার নোংরা।নোংরা খাবার জিনিসে কেউ পছন্দ করে না। ডিম পানিতে পরিষ্কার না করাই ভাল। ওতে খোসার সূক্ষ ফাঁক দিয়ে পানি ডিমের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। খোসার নোংরা ছুরি দিয়ে চেঁচে শিরিষের কাগজ বা খসখসে তোয়ারে দিয়ে পরিস্কার করে ফেলুন।

ডিম বাজারে বা দূরের জায়গায় পাঠাবার নানা উপায় আছে। নিচে সে গুলো বর্ণনা করা হলো
(১) ডিমের কার্টুন বা কেস এ করে। আর এটাই সবথেকে বেশি প্রচলিত। কারণ এইসব কার্টুনে ডিম রাখার জন্যে গর্তগুলোতে ডিম রাখলে সেটা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। তাছাড়া এক একটি কার্টুন বা কেস- এ সর্বনিম্ন ত্রিশটা করে ডিম নেয়া যায়। এভাবে একসঙ্গে অনেকগুলো কাটুর্ন পরপর (ভ্যান অথবা ট্রাকে) চাপিয়ে তারপর বাইরে শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে যতো দূর ইচ্ছে চালান করা যায়।
(২) কাঠের ফোকর ওলা ট্রেতেঃ কাঠের ট্রের ওপরে একটা হ্যাল্ডের লাগানো।ধরে বয়ে নিয়ে যাবার জন্য। আর সবই আগের বলা কার্টুনের মতো ।তবে কাঠের ট্রেগুলো পিচ বোর্ডের বাক্রে ভরবার দরকার পড়ে না। হাতে করে বয়ে নেওয়া যায় বা সুবিধা মতো কিছুতে বসিয়েও নেওয়া চলে।
(৩) ঝুড়িতে: প্রথমে খড়/ বিচুলির একটা স্তর। তারপর একস্তর ডিম। আবার একস্তর খড়/বিচুলি এবং তার ওপর ডিম। এভাবে ঝুড়ি যত বড় হবে ডিমের স্তর তত বাড়িয়ে নেয়া যায়। শেষে সমস্ত ঝুড়ি একটা দড়িতে বেঁধে নিয়ে যতো দূর ইচ্ছা গরুর গাড়িতে, বাসের মাথায়, ট্রেনে চালান দেয়া যায়।
(৪) মাটির হাঁড়িতেঃ ওপরের নিয়মে সবটাই। তবে এখানে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে যাতে মাটির হাঁড়ি ভেঙ্গে না যায়।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ‘ এ।